কনফারেন্স কলের জন্য কোন মাইক্রোফোন ভালো?

বর্তমান প্রযুক্তির যুগে কনফারেন্স কল মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যেসব মানুষ ঘরে বসে কাজ করে, দূরবর্তী কোনো প্রজেক্টের কাজ করে, বা বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন হয়, কনফারেন্স কল তাদের কাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আবার কনফারেন্স কলে যাতে আপনি কোনো সমস্যা ছাড়া সুন্দরভাবে কথা বলতে পারেন, অপরদিকে মানুষগুলো যেন আপনাকে স্পষ্টভাবে শুনতে পারে এবং আপনার কথা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে সেজন্য দরকার একটি ভালো মানের মাইক্রোফোন। 

 

একটি ভালো মানের মাইক্রোফোন কনফারেন্স কলের গুণগত মান নিশ্চিত করে। এটি আপনার কথাগুলো স্পষ্টভাবে অপরদিকের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজও কমিয়ে রাখে। তাই, কনফারেন্স কলের জন্য সঠিক মাইক্রোফোন নির্বাচন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। 

 

আজকের ব্লগে আমরা কনফারেন্স কলের জন্য ভালো মাইক্রোফোনগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। পাশাপাশি একটি ভালো মাইক্রোফোন কেনার সময় যেসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত, কী কী বৈশিষ্ট্য দেখে বুঝতে পারবেন এই মাইক্রোফোনটি ভালো, সেসব বিষয় নিয়েও আলোচনা করবো। 

 

কনফারেন্স কলের জন্য সেরা কয়েকটি মাইক্রোফোন

 

যেকোনো জিনিস কেনার আগে আমরা যদি জানতে পারি, এই একই জিনিস আমার পরিচিত কেউ ইতোমধ্যে ব্যবহার করছে, স্বভাবতই আমরা তার কাছে জানতে চাই, জিনিসটি ব্যবহার করে কেমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। তাই ব্যবহারকারীদের কাছে কিছু জনপ্রিয় এবং ভালো রেটিং ও রিভিউ অর্জনকারী মাইক্রোফোনের তালিকাঃ

 

Top Microphones For Conference Calls

 

১. Blue Yeti USB Microphone

 

এটি একটি কার্ডিওয়েড মাইক্রোফোন এবং খুব সহজেই সংযোগ করা যায়। এটি এর সাউন্ড কোয়ালিটির জন্য বিখ্যাত এব খুবই কার্যকর। 

 

২. Shure MV5 Lavalier Microphone

 

ল্যাভালিয়ার মাইক্রোফোনগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি মডেল এটি। এটি খুবই হালকা, সহজে বহনযোগ্য এবং সাউন্ড কোয়ালিটিও অত্যন্ত চমৎকার। 

 

৩. Jabra Speak 750



এটি বিভিন্ন দিক থেকে শব্দ গ্রহণ করতে সক্ষম একটি ডেস্কটপ মাইক্রোফোন। একাধিক ব্যক্তির কনফারেন্স কলের জন্য এটি একটি খুবই জনপ্রিয় এবং আদর্শ মডেল। যারা কনফারেন্স কলের জন্য ফোন খুঁজছেন তাদের জন্য একটি দুর্দান্ত পছন্দ হতে পারে- Yealink CP920 Conference Phone

 

৪. Rode NT-USB

 

এই মাইক্রোফোনটি একটি উচ্চ মানের ইউএসবি মাইক্রোফোন। সাধারণত এটি স্ট্রিমিং এবং  পডকাস্টিং -এর জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে কনফারেন্স কলের জন্য ব্যবহারেও এটি চমৎকার কাজ করে। 



৫. Audio-Technica AT2020USB+ 

 

একটি উচ্চ মানের কনডেনসার মাইক্রোফোন এবং পডকাস্ট, ভয়েসওভার, বা একক অডিও রেকর্ডিং-এর জন্য আদর্শ। এটি একটি স্টুডিও মানের ইউএসবি মাইক্রোফোন। 

 

৬. Logitech Blue Snowball

 

এটি একটি ইউএসবি মাইক্রোফোন যা ব্যবহার করা খুবই সহজ। হাই-ডেফিনিশন অডিও রেকর্ডিং, কনফারেন্স কল, এবং পডকাস্টের জন্য ভালো মানের। ইউএসবি এবং ওয়্যারলেস মাইক্রোফোনের আরও বিকল্পের জন্য, দেখে আসতে পারেন Trimatrik এর ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন সমূহ

 

৭. Samson Go Mic

 

এটি পোর্টেবল এবং কমপ্যাক্ট উভয় ফর্ম্যাটেই পাওয়া যায়। ফলে সহজেই ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে ক্লিপ করা যায়। বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য এবং এই মডেলের মাইক্রোফোনগুলোর কার্ডিওইড ও অমনিডিরেকশনাল দুই ধরনের প্যাটার্ন মোডই রয়েছে। 

৮. Sennheiser SP 30

 

উন্নত সাউন্ড কোয়ালিটি যুক্ত পোর্টেবল স্পিকারফোন যা সহজেই সেটআপ করা যায়। এটি ইউএসবি এবং ব্লুটুথ উভয়ভাবেই সংযোগ দিয়ে ব্যবহার করা যায়। 

 

৯. Beyerdynamic FOX

 

এটি একটি স্টুডিও মানের ইউএসবি মাইক্রোফোন, সহজেই সেটআপ এবং ব্যবহার করা যায়। এর সাহায্যে মিউজিক রেকর্ডিং, ভিডিও কল, এবং পডকাস্টিং করা যায় আদর্শভাবে। 

 

১০. Poly Sync 20

 

এই মডেলের মাইক্রোফোনগুলো একাধারে স্মার্ট স্পিকারফোন, ব্লুটুথ, এবং ইউএসবি সংযোগের সুবিধা প্রদান করে। এটি পোর্টেবল এবং ভয়েস কলের জন্য উন্নত মানের সাউন্ড কোয়ালিটি নিশ্চিত করে। 

 

কনফারেন্স কলের জন্য কোনটি আপনার বাছাই করা উচিত

 

আপনার জন্য কোন মাইক্রোফোনটি সেরা তা নির্ভর করবে আপনার প্রয়োজনের উপর। যেমন: 

 

 

আরও বিভিন্ন ধরনের PA সাউন্ড সিস্টেম এবং মাইক্রোফোনগুলি ঘুরে দেখে যাচার করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইট থেকে।

 

মাইক্রোফোন কেনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত 

 

এখানে বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোফোন, তাদের ব্যবহার এবং কোন মাইক্রোফোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো-

 

Things To Consider When Buying A Microphone

 

১. মাইক্রোফোনের ধরন

 

আপনি যখন কোনো মাইক্রোফোন কিনতে যাবেন বা অনলাইনে কেনার জন্য মাইক্রোফোন বাছাই করতে শুরু করবেন, আপনার সামনে অসংখ্য অপশন আসবে। প্রতিটি ব্র্যান্ডই তাদের নিজেদের কাছে সেরা। কিন্তু আপনাকে আপনার জন্য সেরা মাইক্রোফোনটি খুঁজে বের করতে হবে। তাই সর্বপ্রথম এর ধরণ বা প্রকারভেদ সম্পর্কে জানা দরকার। মাইক্রোফোনের প্রধান কয়েকটি ধরণ হলোঃ

 

 

এই ধরনের মাইক্রোফোনগুলো ব্যবহার করা বেশ সহজ এবং সরাসরি কম্পিউটারের সাথে সংযোগ করা যায়। এগুলো সাধারণত খুবই ভালো মানের অডিও প্রদান করে। আপনি যদি সহজেই সেটআপ করা যায় এমন কোনো মাইক্রোফোন খুঁজে থাকেন, তাহলে ইউএসবি মাইক্রোফোন আপনার জন্য উপযুক্ত। শুধু একটি ইউএসবি পোর্টে প্লাগ ইন করেই আপনি এটি ব্যবহার শুরু করতে পারেন। 

 

 

এই মাইক্রোফোনগুলো বেশ ছোট এবং ক্লিপ-অন ধরনের হওয়ায় এগুলো সহজেই পোশাকের সাথে সংযুক্ত করা যায়। সাধারণত এই ধরনের মাইক্রোফোন একক বক্তার জন্য উপযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ভিডিও কনফারেন্স বা প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় আপনার হাত মুক্ত রাখতে চাইলে, অর্থাৎ মাইক্রোফোন হাতে ধরে প্রেজেন্টেশন দিতে না চাইলে বা ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলতে না চাইলে ল্যাভালিয়ার মাইক্রোফোন আপনার জন্য উপযুক্ত। 

 

 

এই মাইক্রোফোনগুলো একাধিক বক্তার জন্য উপযুক্ত এবং এগুলো ডেস্কে বসানো হয়। সাধারণত এই ধরণের মাইক্রোফোনগুলো কনফারেন্স রুমের জন্য আদর্শ পছন্দ, যেখানে একটি মাইক্রোফোন ব্যবহার করে রুমে উপস্থিত সকল বক্তা কথা বলতে পারেন। 

 

 

যেসব মানুষের মাইক্রোফোন সাথে নিয়ে চলাফেরা করার প্রয়োজন হয়, তাদের জন্য ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন সেরা। যদি আপনার মাইক্রোফোনটি সহজে বহনযোগ্য এবং অন্যের সাথে শেয়ার করা যায় তাহলে এটি একাধিক লোকের জন্যও উপযুক্ত হতে পারে। ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন এর আরও বিভিন্ন মডেল যাচাই করতে চাইলে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট

 

২. সাউন্ড কোয়ালিটি

 

কনফারেন্স কলের সময় স্পষ্ট এবং পরিষ্কার সাউন্ড খুবই জরুরী। তাই মাইক্রোফোন কেনার আগে অবশ্যই এর সাউন্ড কোয়ালিটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ভালো মানের মাইক্রোফোনের কিছু বৈশিষ্ট্য কনফারেন্সের সময় আপনার বলা কথাগুলোর সাউন্ড কোয়ালিটি উন্নত করতে পারেঃ

 

 

নয়েজ ক্যান্সেলিং মাইক্রোফোনগুলো ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ কমিয়ে দেয় এবং শুধুমাত্র বক্তার কন্ঠটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। আপনার সাথে কনফারেন্সে যুক্ত ব্যক্তিরা আপনার কথা স্পষ্টভাবে শুনতে পারবে, এই নিশ্চয়তা দেয়। এমনকি, আপনি যদি কোনো কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেন, তবুও এটি কোলাহলমুক্ত সাউন্ড প্রদান করতে সক্ষম। 

 

 

ভালো মানের একটি মাইক্রোফোনের ফ্রিকোয়েন্সী রেসপন্স ২০ হার্টজ থেকে ২০০  কিলোহার্টজ পর্যন্ত হতে পারে। আপনি মানব কন্ঠের সমস্ত নুয়ান্সগুলো ধারণ করতে পারবেন তার নিশ্চয়তা দেয় এবং একটি স্পষ্ট ও প্রাকৃতিক সাউন্ড প্রদান করে। 

 

 

মাইক্রোফোন কোন দিক থেকে শব্দ ক্যাপচার করতে সক্ষম, তা এর ডিরেকশনালিটি নির্ধারন করে দেয়। 

 

 

এই ধরণের মাইক্রোফোনগুলো সামনের দিক থেকে বেশি শব্দ গ্রহন করে এবং পেছনের দিক থেকে কম শব্দ গ্রহণ করে। এগুলো একক বক্তার জন্য উপযুক্ত। 

 

 

এটি চারদিক থেকেই শব্দ গ্রহণ করে। বড় কোনো কনফারেন্স রুমে একাধিক বক্তার জন্য উপযুক্ত। তাই আজই আপনার কনফারেন্স রুমের জন্য সাউন্ড সিস্টেম অরডার করুন আমাদের ওয়েবসাইট থেকে 

 

৩. পোর্টেবিলিটি

 

যদি আপনার প্রয়োজন অনুসারে মাইক্রোফোনটি বিভিন্ন স্থানে বহন করা দরকার হয়, তাহলে পোর্টেবিলিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ল্যাভালিয়ার এবং ওয়্যারলেস মাইক্রোফোনগুলো খুব সহজে বহন করা যায় এবং সেটআপ করাও খুব সহজ। তবে, ডেস্কটপ মাইক্রোফোন তুলনামূলক ভারী হয়ে থাকে এবং এগুলো একটি নির্দিষ্ট স্থানে সেট করে রাখার জন্য আদর্শ। 

 

৪. সেটআপ এবং ইন্টারফেস

 

কনফারেন্স কলের জন্য দ্রুত এবং সহজ মাইক্রোফোন সেটআপ করা প্রয়োজন। তাই মাইক্রোফোন কেনার সময় এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত; যাতে সহজেই সংযোগ করা যায় এবং ব্যবহার করা যায়। সাধারণত ইউএসবি মাইক্রোফোনগুলো প্লাগ-এন্ড-প্লে টাইপ হয়ে থাকে। এই মাইক্রোফোন সেটআপ করার জন্য অতিরিক্ত কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করার প্রয়োজন হয় না। 

 

৫. বাজেট

 

মাইক্রোফোন কেনার বাজেট এবং বাজেট অনুযায়ী মাইক্রোফোন বাছাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমেই আপনার বাজেট নিশ্চিত করুন এবং তারপর আপনার বাজেটের মধ্যে সেরা মাইক্রোফোন নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত ভালো মানের মাইক্রোফোনের দাম $৫০ থেকে $২০০ পর্যন্ত হতে পারে। তবে কিছু উচু মানের মডেল এবং ব্র্যান্ডের মাইক্রোফোনের দাম এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। 

 

৬. ব্যবহারকারীদের রিভিউ এবং অভিজ্ঞতা যাচাই

 

মাইক্রোফোন কেনার আগে অবশ্যই এটি পূর্বে যেসব ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা এবং রিভিউ পড়ে নেয়া উচিত। এর ফলে আপনার বাচাইকৃত মাইক্রোফোনটি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য কতখানি উপযুক্ত সেটা বুঝতে পারবেন। এছাড়া এটি কেমন কাজ করে এবং আপনার প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা সে বিষয়েও ধারণা লাভ করতে পারবেন। 

 

উপসংহার 

 

কনফারেন্স কলের জন্য সেরা মাইক্রোফোনটি নির্বাচন করার সময় আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা, ব্যবহারের পরিবেশ, এবং বাজেট বিবেচনা করে মাইক্রোফোন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। মাইক্রোফোনের ধরণ, পোর্টেবিলিটি, সাউন্ড কোয়ালিটি, সেটআপের জটিলতা, এবং ব্যবকারীদের রিভিউ যাচাই করে আপনার জন্য উপযুক্ত মাইক্রোফোনটি সহজভাবে নির্বাচন করতে পারবেন। 

 

মনে রাখবেন, একটি ভালো মানের মাইক্রোফোনের কারণে শুধু আপনার কণ্ঠই পরিষ্কারভাবে পৌছাবে না, বরং এটি আপনার কর্মদক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের প্রতিনিধি হয়ে আপনার সহকর্মী বা উল্টো দিকে মানুষগুলোর নিকট তা বহুগুণে বাড়িয়ে তুলবে। 

 

তাই আশা করছি, আজকের ব্লগে আলোচনা করা বিষয়গুলো আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত মাইক্রোফোন নির্বাচন করতে অনেক সহায়তা করবে। উচ্চ-মানের মাইক্রোফোন এবং সাউন্ড সিস্টেম সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, আপনি Trimatrik-এ ঘুরে আসতে পারেন।